রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ“যে ব্যক্তি রাতের বেলা সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়বে সেটা তার জন্য যথেষ্ঠ হবে”।সহীহ বুখারিঃ ৫০১০, সহীহ মুসলিমঃ ৮০৭।
“যখন বিছানায় ঘুমুতে যাবে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার উপর সব সময় একজন হেফাযতকারী নিযুক্ত থাকবে এবং ভোর পর্যন্ত শয়তান তোমার ধারে কাছেও আসতে পারবে না।”সহীহ বুখারী, খন্ড ৬, অধ্যায় ৬১, হাদিস নং- ৫৩০।
ঘুমানো ও জাগ্রত হবার সুন্নতি আদব-
১। ওযু করে বিছানায় যাওয়া।
কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারা ইবনে আযেব রা.-কে বলেছিলেন― যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন নামাযের ওযুর মত ওযু করবে। [মুসলিম : ৪৮৮৪]
২। ঘুমানোর আগে বিছানা ঝারা। কারণ সে জানেনা তার বিছানায় কি ছিল।
৩। ডানদিকে পাশ ফিরে ঘুমাবে।
কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :― অতঃপর ডান কাত হয়ে ঘুমাও।৪। শোয়ার সময় ডান হাতকে ডান গালের নিচে স্থাপন করা। রাসূল (ছাঃ) শোয়ার সময় ডান হাত গালের নিচে রেখে নিম্নের দো‘আটি পড়তেন-
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ক্বিনী ‘আযা-বাকা ইয়াওমা তাব‘আছু ইবা-দাকা।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! যেদিন তুমি তোমার বান্দাদেরকে পুনরুত্থিত করবে যেদিনকার আযাব হ’তে আমাকে রক্ষা করো। (সিলসিলা সহীহাহ ২৭৫৪ নং)
৫। দোয়া পড়ে ঘুমানো।ঘুমানোর দুয়া পড়াঃ
বিস্মিকাল্লা-হুম্মা আমুতু ওয়া আহ্ইয়া।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনার নাম নিয়েই আমি মৃত্যুবরণ করছি (ঘুমাচ্ছি) এবং আপনার নাম নিয়েই জীবিত (জাগ্রত) হবো।
সহীহ বুখারীঃ ৬৩২৪, সহীহ মুসলিমঃ ২৭১১। জিকির তথা আল্লাহর নাম নেয়া ছাড়া ঘুমানো মাকরুহ। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি আল্লাহর জিকির ছাড়া শুয়ে পড়বে তা তার জন্য কেয়ামতের দিন আল্লাহর পক্ষ থেকে আক্ষেপের বিষয় হবে। (আবু দাউদ : ৪৪০০)।
সূরা
এখলাস, সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পড়া। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী (সা.)
যখন প্রতি রাতে নিজ বিছানায় যেতেন দুই হাতের কবজি পর্যন্ত একত্রিত করতেন,
অতঃপর তার মাঝে ফু দিতেন এবং সূরা এখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়তেন।
অতঃপর দুই হাত যথা সম্ভব সারা শরীরে মলে দিতেন। মাথা, চেহারা এবং শরীরের
সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। এরূপ পরপর তিনবার করতেন। (তিরমিজি : ৩৩২৪)।
* আয়াতুল কুরসী পাঠ করা – ১ বার।ঘুমানোর পূর্বে আয়াতুল কুরসী পাঠ করার ফযীলতঃ
# সকাল পর্যন্ত তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন হেফাজতকারী (ফেরেশতা) তাকে নিরাপত্তা দেবে।
# শয়তান তার কাছে আসতে পারবেনা।
“যখন বিছানায় ঘুমুতে যাবে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার উপর সব সময় একজন হেফাযতকারী নিযুক্ত থাকবে এবং ভোর পর্যন্ত শয়তান তোমার ধারে কাছেও আসতে পারবে না।”
সহীহ বুখারী, খন্ড ৬, অধ্যায় ৬১, হাদিস নং- ৫৩০।
সুরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত পড়া – ১ বার।
ঘুমানোর আগে সুরা বাক্বারার শেষ ২ আয়াত (২৮৫+২৮৬) পড়ার ফযীলতঃ
ক. রাত জেগে তাহাজ্জুদ নামায পড়ার সমান সওয়াব পাওয়া যাবে
খ. বালা-মুসিবত ও যেকোনো ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য যথেষ্ঠ হবে।
গ. জিন ও শয়তানের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য যথেষ্ঠ হবে।
ঘ. আয়াতগুলো পড়ে শেষ “আমিন” বললে আয়াতগুলোতে যেই দুয়া আছে সেইগুলো আল্লাহ তাআ’লা কবুল করে নেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“যে ব্যক্তি রাতের বেলা সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়বে সেটা তার জন্য যথেষ্ঠ হবে”।
সহীহ বুখারিঃ ৫০১০, সহীহ মুসলিমঃ ৮০৭।
* ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর নিম্নোক্ত দোয়া পড়া।
'আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আহইয়ানা বাদা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিনুশুর।'
অর্থ যাবতীয় প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে মৃত্যু দেয়ার পর জীবিত করে দিয়েছেন এবং তার কাছেই ফিরে যাব। (মুসলিম : ২৭১১)।ঘুমানোর আগে সুরা কাফিরুন পড়া – ১ বার
উপকারীতাঃ শিরক থেকে বাচতে সাহায্য করবে।
সুরা ইখলাস পাঠ করা – ১ বার, ৩ বার অথবা ১০ বার অথবা, যার যতবার পড়তে ভালো লাগে। তবে ৩ বার পড়লে যেহেতু এক কুরান খতম করার সমান, সুতরাং ৩ করা যেতে পারে। কারো ইচ্ছা হলে আরো বেশি ১০ বারও করতে পারেন – ১০ বার সুরা ইখলাস পড়লে তার জন্য জান্নাতে একটা বাড়ি বানানো হয়।
ক. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীগণকে বললেন, “তোমরা কি এক রাতে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়তে পারনা”? প্রস্তাবটি সাহাবাদের জন্য কঠিন মনে হল। তাই তাঁরা বলে উঠলেন, “হে আল্লাহর রসুল! এই কাজ আমাদের মধ্যে কে করতে পারবে”? (অর্থাৎ কেউ পারবে না।). তিনি বললেন, “ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ, আল্লাহুস স্বামাদ” (সুরা ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান”।. (অর্থাৎ এই সুরা পড়লে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়ার সমান নেকী পাওয়া যাবে)।
সহীহুল বুখারী ৫০১৫, নাসায়ী ৯৯৫, আবু দাউদ ১৪৬১, আহমাদ ১০৬৬৯।
খ. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“যে ব্যক্তি সুরা ইখলাস ১০ বার পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানানো হবে”।
সহীহ আল-জামি আস-সগীর ৬৪৭২।
তাসবীহ’, তাহ’মীদ ও তাকবীর পাঠ করাঃ
৩৩ বার তাসবীহ’ (সুবহা’নাল্লাহ), ৩৩ বার তাহ’মীদ (আলহা’মদুলিল্লাহ), ও ৩৪ বার তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পাঠ করার ফযীলতঃ
ক. কারো একজন দাস থাকলে দিনে-রাতে যে সেবা-যত্ন ও সাহায্য করতো তার থেকেও বেশি উপকার পাওয়া যাবে এই আমল করলে।
খ. মোট ১০০ বার পড়লে, মীযানে ১০০০ নেকীর সমান হবে।
ক. আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহু আমার কাছে আটা পেষার দরুন তার হাতে ফোসকা পড়ে যাওয়ার অভিযোগ করলেন। আমি বললাম তোমার পিতা (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে গিয়ে যদি একটা খাদেমের আবদার জানাতে।
(ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খাদেম দেওয়ার কথা বললেন তখন) তিনি (রাসুল) বললেনঃ তোমার জন্য কি খাদেমের চাইতে উত্তম কোন কিছু বলব না? (তা হল) তোমরা যখন তোমাদের শয্যাগ্রহণ করবে তখন আলহা’মদু লিল্লাহ ৩৩ বার, সুবহা’নাল্লাহ ৩৩ বার এবং আল্লাহু আকবার ৩৪ বার পড়বে।
সুনানে আত-তিরমিজি, দু’আ অধ্যায়, অধ্যায় ৪৮, হাদীস নং- ৩৪০৮। হাদীসটি সহীহ, দারুস সালাম।
খ. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“যখন শয্যাগ্রহণ করবে তখন সুবহানাল্লাহ, আল্লাহু আকবার এবং আলহামদু লিল্লাহ পাঠ করবে একশত বার। এটা তোমাদের যবানে তো হল একশ, কিন্তু মীযানের পাল্লায় হবে এক হাজার (নেকী)।
সুনানে আত-তিরমিজি, দু’আ অধ্যায়, অধ্যায় ৪৮, হাদীস নং- ৩৪১০। হাদীসটি হাসান সহীহ, দারুস সালাম।
সুরা মুলক পড়া
@ প্রতিদিন (দিনে বা রাতে যেকোনো এক সময়) সুরা মুলক মুলক তেলাওয়াত করা গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত।
“রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আলিফ লাম মীম তানজিলুল কিতাব (সুরা আস-সাজদা) ও তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলকু (সুরা মুলক) তেলাওয়াত না করে কোনদিন ঘুমাতেন না”।
সুনানে আত-তিরমিযী ২৮৯২, মুসনাদে আহমাদ ১৪২৯। শায়খ আলবানীর মতে হাদীসটি সহীহ, সহীহ তিরমিযী ৩/৬।
এই সুরাটি নিয়মিত প্রতিদিন তেলাওয়াত করলে কবরের আজাব থেকে সুরক্ষা করবেঃ
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতের বেলা তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলক (সুরা মুলক) তেলাওয়াত করবে আল্লাহ তাকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর যামানায় এই সুরাটিকে আমরা “আল-মা’আনিয়াহ” বা সুরক্ষাকারী বলতাম। যে রাতের বেলা এই সুরাটি পড়বে সে খুব ভালো একটা কাজ করলো”।
সুনানে আন-নাসায়ী ৬/১৭৯। শায়খ আলবানীর মতে হাদীসটি হাসান সহীহ, সহীহ আত-তারগীব ওয়াল তারহীব ১৪৭৫।
@ এই সুরা প্রত্যেকদিন রাতের বেলা তেলাওয়াত করলে কিয়ামতের দিন শাফায়াত করে জান্নাতে নিয়ে যাবে ইন শা’ আল্লাহঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “কুরআনে এমন একটা সুরা আছে যার মধ্যে ৩০টা আয়াত রয়েছে যেটা একজন ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করবে এবং তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর সেটা হলো তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলকু (সুরা মুলক)”।
সুনানে আত-তিরমিযী ২৮৯১, সুনানে আবু দাউদ ১৪০০, মুসনাদের আহমাদ, ইবনে মাজাহ ৩৭৮৬।
ঘুমের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপছন্দনীয় কিছু দেখলে রাসূল (সা.) পাঁচটি কাজ করতে বলেছেন।
# বাম দিকে তিনবার থুতু ফেলা।
# আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতয়নির রজিম বলে আল্লাহ তায়ালার কাছে আশ্রয় চাওয়া।
# এ স্বপ্নের কথা কাউকে না বলা।
# যে কাতে শোয়া ছিল সে কাত থেকে ঘুরে অর্থাৎ পার্শ্ব পরিবর্তন করে শোয়া।
# নামাজে দাঁড়িয়ে যাওয়া। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) এ পাঁচটি কাজ উল্লেখ করে বলেন, যে এই কাজগুলো করবে খারাপ স্বপ্ন তার ক্ষতি করতে পারবে না বরং এ কাজ তার ক্ষতি দূর করে দেবে।
তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপকারিতা
ক) সুন্নতের অনুসরণ।
খ) শরীরকে আরাম দেওয়া, কেননা দিনের ঘুম রাতের ঘুমের ঘাটতি পূরণ করতে পারে না।
গ) ফজরের নামাজের জন্য খুব সহজে এবং পূর্ণ শক্তি ও চাঞ্চল্যতার সাথে জাগ্রত হওয়া যায়।
ঘ) তাহাজ্জুদের নামাজের জন্য শেষ রাতে জাগ্রত হতে ইচ্ছুক ব্যক্তির এটি বড় সহায়ক ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন