শুক্রবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৫

একজন মুসলিমের প্রাত্যহিক শিষ্টাচার...

একজন মুসলিমের প্রাত্যহিক শিষ্টাচার---


1. আসসালামু আলাইকুম=আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হউক…


যখন আমাদের সাথে কারো দেখা বা কথা হয় তখন আসসালামু আলাইকুম বলুন.. যদি নেকী বেশী হাসিল করতে চান তাহলে ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ বলতে পারেন..
পূর্ণ সালাম হল আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু
এবং পূর্ণ উত্তর হল ‘ওয়া আলাইকুমুস্‌সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু’।

2. আলহামদুলিল্লাহ=সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য…


যখন কেউ আপনি কেমন আছেন জানতে চাই বা কোন ভাল সংবাদ শুনলেন,কিছু খাওয়ার পর,হাচি দেওয়ার পর, সে ক্ষেত্রে আলহামদুলিল্লাহ বলুন…

ভালো কিছু খাওয়া বা পান করা শেষে, কোন শোভ সংবাদ শোনা হলে, কেউ কেমন আছো জিজ্ঞেস করলে- তার জবাবে 'আলহামদুলিল্লাহ' বলা । -(ইবনে মাজাহঃ ৩৮০৫)

3. সুবাহানাল্লাহ=আল্লাহ তায়ালা পবিত্র…


যখন আল্লাহর কোন মহিমা,সুন্দর ফুল ফল মাছ,বা ভাল কথা শ্রাবণ,আশ্চার্য কোন কথা শুনলে তখন সুবাহানাল্লাহ বলুন...
স্বাভাবিকের মধ্যে কোন ব্যতিক্রম দেখলে কিংবা আশ্চর্য ধরণের কোন কথা শুনলে 'সুবহানাল্লাহ' বলা । -(বুখারীঃ ৬২১৮)

4. নাউজুবিল্লাহ=আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই…


কোন খারাপ কিছু শুনলে বা দেখলে তখন নাউজুবিল্লাহ বলুন…
কোন বাজে কথা শুনলে কিংবা আল্লাহর আজাব ও গজবের কথা শুনলে বা মনে পড়লে "না'উজু বিল্লাহ" বলা । -(বুখারীঃ ৬৩৬২)

5. আস্তাগফিরুল্লাহ=আল্লাহর কাচে ক্ষমা চাই…


যদি কোন গুনাহ হয় বা মাথাই এমন চিন্তা আসে তখন আপনি আস্তাগফিরুল্লাহ বলুন..
কথা প্রসঙ্গে কোন গুনাহর কথা বলে ফেললে, 'আস্তাগফিরুল্লাহ' বলা । -(সূরা মুহাম্মদঃ ১৯)

6. জাযাক আল্লাহ খাইর= আল্লাহ আপনাকে এটার উত্তম প্রতিদান দান করুন…


যখন কেউ আমাদের কোন উপকার করে বা ভাল কিছু শিক্ষা দেই তখন তাকে জাযাক আল্লাহ খাইর বলুন...
আর কেউ জাযাক আল্লাহ খাইর বললে আমীন বলুন..
কেউ কিছু দিলে কিংবা কারো মাধ্যমে কোন কাজ হলে তার বদলে 'জাযাকাল্লাহু খাইরান' বলা । -(বুখারীঃ ৩৩৬)

7. মা শা আল্লাহ= আল্লাহ যেভাবে করতে চেয়েছেন…


প্রশংসার বহিঃপ্রকাশ,কোন ভাল কিছু দেখলে,পরীক্ষাই ভাল করেছে শুনলে,ভাল কাজ করেছে এমন সময়" মা শা আল্লাহ বলুন..
ভালো যে কোন কিছু বেশি বা ব্যতিক্রম দেখলে 'মা-শা আল্লাহ' বলা । -(মুসলিমঃ ৩৫০৮)

8. ইন্নালিল্লাহ=নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য..


কোন খারাপ খবর শুনলে,জিনিস ভেঙ্গে গেলে তখন ইন্নালিল্লাহি বলুন..
কোন বিপদের কথা শুনলে কিংবা কোন খারাপ বা অশুভ সংবাদ শুনলে, কোন কিছু হারিয়ে গেলে, কোন কিছু চুরি হয়ে গেলে, কোন কষ্ট পেলে 'ইন্না লিল্লাহ' বলা । --(মুসলিমঃ ২১২৬)

9. ইন শা আল্লাহ= যদি আল্লাহ চান..


ভবিষ্যতে কোন ওয়াদা দিলে,বা কোন কাজ করবেন, তখন ইন শা আল্লাহ বলুন..

ভবিষ্যতে কোন কিছু করবে বললে 'ইন শা আল্লাহ' বলা । -(আল কাহাফঃ ২৩-২৪)

10. ফি আমানিল্লাহ=আল্লাহর কাছে আমানত..


বিদায়ের সময়, কেউ দোয়া করতে বললে তাকে বলুন.. জি জি ফি আমানিল্লাহ..

  11. সিঁড়ি বেঁয়ে উঠার সময় বলবে আল্লাহু আকবর... (বুখারীঃ ২৯৯৩)


  12. সিঁড়ি বেঁয়ে নামার সময় বলবে সুবাহানাল্লাহ... (বুখারীঃ ২৯৯৩)

 13. কারো হাঁচি আসলে ''আলহামদু লিল্লাহী 'আলা কুল্লী হা-ল'' বলা । -(আত তিরমিযীঃ ২৭৪১)


 14 . কোন হাঁচি দাতা 'আলহামদুলিল্লাহ' বলতে শুনলে- 'ইয়ারহামুকাল্লাহ' বলা । -(বুখারীঃ ৬২২৪)

 15. নিশ্চিতভাবে না জেনে কোন বিষয়ে কিছু বললে, কথা শেষে 'ওয়াল্লাহু আলুম' বলা । -(বুখারীঃ ৫৫৭০)

16. আল্লাহ তা'আলার শ্রেষ্ঠত্ব, মহত্ব বা বড়ত্বের কোন কৃতিত্ব দেখলে কিংবা শুনলে 'আল্লাহু আকবর' বলা

17.. ভালো কোন কিছু খাওয়া বা পান করার সময়, কোন কিছু লেখা বা পড়ার সময়, কোন কাজ শুরু করার সময় 'বিসমিল্লাহ' বলে শুরু করে । -(বুখারীঃ ৫৩৭৬)


18. কেউ হাঁচি দিলে বলবে- আলহামদু লিল্লা-হ, অর্থ- “সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র”

উত্তরে তার মুসলিম ভাই বা সাথী বলবে - ইয়ারহামুকাল্লা-হ
অর্থ- “আল্লাহ আপনাকে রহমত করুন”

আবার হাঁচি দাতা বলবে -ইয়াহ্‌দীকুমুল্লা-হু ওয়া ইউসলিহু বা-লাকুম অর্থ- “আল্লাহ আপনাদেরকে সৎপথ প্রদর্শন করুন এবং আপনাদের অবস্থা উন্নত করুন।



ঘুম থেকে জাগ্রত হবার পর বলুন লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ্
শপথ নেয়ার সময় বলুন ওয়াল্লাহি বিল্লাহ
পাপের অনুশোচনায় বলুন আস্তাগফিরুল্লাহ
পরপোকার করার সময় বলুন ফিসাবিলিল্লাহ
কাউকে ভালবাসলে বলুন লিহুব্বিল্লাহ
বিবাহ করার সময় বলুন আমানতুবিল্লাহ
কষ্টে ও বেদনায় বলুন ইয়া -আল্লাহ



সমস্যা দেখা দিলে বলুন তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ
অপ্রীতিকর কিছু দেখলে বলুন নাওযুবিল্লাহ
আনন্দদায়ক কিছু দেখলে বলুন ফাতাবারাকাল্লাহ
মোনাজাতে অংশ গ্রহনের  সময় বলুন আমিন।।।
 



দোয়া পড়ে ঘুমানো।ঘুমানোর দুয়া পড়াঃ
বিস্মিকাল্লা-হুম্মা আমুতু ওয়া আহ্ইয়া।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনার নাম নিয়েই আমি মৃত্যুবরণ করছি (ঘুমাচ্ছি) এবং আপনার নাম নিয়েই জীবিত (জাগ্রত) হবো।
সহীহ বুখারীঃ ৬৩২৪, সহীহ মুসলিমঃ ২৭১১।

* ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর নিম্নোক্ত দোয়া পড়া। 'আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আহইয়ানা বাদা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিনুশুর।' অর্থ যাবতীয় প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে মৃত্যু দেয়ার পর জীবিত করে দিয়েছেন এবং তার কাছেই ফিরে যাব। (মুসলিম : ২৭১১)।

খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ ও শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা ...
খাওয়ার শুরুতে ‘ বিসমিল্লাহ ’ বলতে ভুলে গেলে এই দু’আ টি পড়তে হয় ‘ বিসমিল্লা-হি আউওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহূ ’
পায়খানায় প্রবেশের দুআটি এই- বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল খুবসী ওয়াল খাবায়িস।(অর্থ- হে আল্লাহ! দুষ্ট পুরুষ জিন এবং দুষ্ট মহিলা জিনদের অত্যাচার থেকে তোমার পানাহ চাই।)
বের হওয়ার সময় বলবে غُفْرَانَكَ ‘গুফরা-নাকা’ (হে আল্লাহ! আমি আপনার ক্ষমা প্রার্থনা করছি’)

ঘরে প্রবেশের সময় যিক্‌র -(বিসমিল্লা-হি ওয়ালাজনা, ওয়াবিস্‌মিল্লাহি খরাজনা, ওয়া ‘আলা রাব্বিনা তাওয়াক্কালনা)।
অর্থ-“আল্লাহ্‌র নামে আমরা প্রবেশ করলাম, আল্লাহ্‌র নামেই আমরা বের হলাম এবং আমাদের রব আল্লাহ্‌র উপরই আমরা ভরসা করলাম”। পরে সালাম দিতে হবে।

বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়ের যিক্‌র-
(বিসমিল্লাহি, তাওয়াককালতু ‘আলাল্লা-হি, ওয়ালা হাওয়া ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ)। অর্থ-“আল্লাহ্‌র নামে (বের হচ্ছি)। আল্লাহর উপর ভরসা করলাম। আর আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই”

আযান শুনে দো‘আ
আল্লা-হুম্মা রববা হা-যিহিদ দা‘ওয়াতিত তা-ম্মাহ, ওয়াছ ছলা-তিল ক্বা-য়েমাহ, আ-তে মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাযীলাহ, ওয়াব‘আছ্হু মাক্বা-মাম মাহমূদানিল্লাযী ওয়া‘আদ্তাহ’ ।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহ্বান এবং প্রতিষ্ঠিত নামাযের তুমিই প্রভু! মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে ওসীলা (জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তর) এবং ফযীলত (সকল সৃষ্টির উপর অতিরিক্ত মর্যাদা দান করুন), আর তাঁকে মাকামে মাহমূদে (প্রশংসিত স্থানে) পৌঁছিয়ে দিন, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাঁকে দিয়েছেন।

ওযু শেষ করে কালিমা শাহাদাত একবার পড়তে হবে-

আশহাদু আল্‌-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্‌দাহু লা শারিকা-লাহু ওয়াআশ্‌হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।
অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কোন মাবূদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন