আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমার উম্মাতের উপর যদি কষ্টকর মনে না করতাম, তাহলে তাদেরকে প্রত্যেক সালাতের সময় দাঁতন (মেসওয়াক) করার নির্দেশ করতাম।” [বুখারী: ৮৮৭, মুসলিম: ৫৮৯]
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, নিশ্চয় বান্দা যখন মিসওয়াক করে ছালাত আদায়ের জন্য দাঁড়ায়, তখন ফেরেশতা তার পিছনে দাঁড়ায়। অতঃপর তার ক্বিরাআত শুনতে থাকে এবং তার কিংবা তার কথার নিকটবর্তী হয়। এমনকি ফেরেশতার মুখ তার মুখের উপর রাখে। তার মুখ থেকে কুরআনের যা বের হয়, তা ফেরেশতার পেটে ভিতর প্রবেশ করে। অতএব তোমরা কুরআন তেলাওয়াতের জন্য মুখ পরিষ্কার কর।
মিসওয়াক
মিসওয়াক করার পদ্ধতি ও উপকরণঃ
ইমাম নববী (রহঃ) (৬৩১-৬৭৬ হিঃ) বলেন,
‘আরাক গাছের ডাল দিয়ে মিসওয়াক করা মুস্তাহাব। অতঃপর স্বাভাবিকভাবে মুখের ডান দিক থেকে মিসওয়াক আরম্ভ করা, যাতে দাঁতের গোড়ার মাংসপেশী থেকে রক্ত বের না হয়’।
১. মিসওয়াক করার পূর্বে বিসমিল্লাহ বলা :
আবুল মালীহ একজন ছাহাবী হ’তে বর্ণনা করেন, ছাহাবী বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বাহনের পিছনে ছিলাম। তাঁর বাহনটি হঠাৎ হোঁচট খেয়ে পড়ল। আমি বললাম, শয়তান অসুস্থ হয়ে পড়েছে অথবা শয়তান ধ্বংস হয়েছে। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, শয়তান অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলবে না। কারণ তুমি যদি এরূপ বল, তবে সে নিজেকে বড় ভাববে; এমনকি বাড়ির আকৃতির ন্যায় (বড়) হয়ে যাবে এবং বলবে যে, আমার শক্তির দ্বারাই এরূপ ঘটেছে। তবে ‘বিসমিল্লাহ’ বল। কারণ এর ফলে সে নিজেকে ছোট ভাববে; এমনকি সে মাছির ন্যায় (ছোট) হয়ে যাবে’।
জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে
বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘বিসমিল্লাহ’ বলে তোমার দরজা বন্ধ কর। কারণ
শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। ‘বিসমিল্লাহ’ বলে বাতি নিভিয়ে দাও। একটু
কাঠখড়ি হলেও আড়াআড়িভাবে রেখে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে পাত্রের মুখ ঢেকে রাখ এবং
পানির পাত্র ঢেকে রাখ’। উপরোক্ত হাদীছ দু’টি দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে,
‘বিসমিল্লাহ’ বললে শয়তান অপমানিত হয় এবং মাছির ন্যায় ছোট হয়ে যায়। ফলে সে
আর ক্ষতি করতে পারে না। এছাড়া প্রত্যেক কাজের পূর্বে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
তাঁর উম্মতের উপর বিসমিল্লাহ বলার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং বিসমিল্লাহ বলে
মিসওয়াক শুরু করা উচিৎ ।
২. ডান দিক দিয়ে শুরু করা :
৩. মাড়ির দাঁতের উপর এবং দুই ঠোঁট উঁচু করে সম্মুখের দাঁতগুলো ভালভাবে পরিষ্কার করা :
৪. হাত দিয়ে জিহবা ভালভাবে রগড়ানো :
৫. ঘুম থেকে উঠে প্রত্যেক ওযূর পূর্বে মিসওয়াক করা :
৬. কমপক্ষে দুই/তিন মিনিট ধরে মিসওয়াক করা :
৭. শেষে মিসওয়াক ধুয়ে ফেলা এবং আল-হামদুলিল্লাহ বলে শেষ করা :
৮. ছিয়াম অবস্থায় মিসওয়াক করা :
মিসওয়াকের ধর্মীয় এবং বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব ও গুণাগুণ
========================== =====
মিসওয়াক করা সুন্নত। উলামায়ে কেরামের মতে, মেসওয়াকের অভ্যাস করার মধ্যে যে সকল উপকার রয়েছে তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো,’ মৃত্যুর সময় কালেমা শাহাদাত নসীব হয়।’
হযরত আবু দারদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, তোমরা মেসওয়াক করা থেকে উদাসীন হয়ো না; কেননা তাহাতে বহু গুণ রয়েছে। তন্মধ্যে শ্রেষ্ঠ গুণগুলি হচ্ছে,
০১। এর দ্বারা আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জন হয়।
০২। নামাজের আগে মেসওয়াক করলে নামাজের ফজিলত ৭৭ গুণ বৃদ্ধি করে দেয় হয়।
০৩। সচ্ছলতা বয়ে আনে।
০৪। মুখের দুর্গন্ধ দূর হয় ।
০৫। দাঁতের মাড়ি শক্ত হয় ।
০৬। মাথা ব্যথা দূর হয় ।
০৭। দাঁতের পীড়া-ব্যথা দূর হয়।
০৮। ফেরেশতারা নূরানী চেহারায় মুছাফাহা (হ্যান্ডশেক) করে।
০৯। দাঁতের শুভ্রতা ও উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয়।
১০। মস্তিস্ক ঠান্ডা থাকে।
১১। দাঁত শক্ত থাকে।
১২। দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পায়।
১৩। পাকস্থলী কর্মক্ষম থাকে।
১৪। শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়।
১৫। বাকশক্তি সুন্দর ও আকর্ষণীয় হয়।
১৬। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
১৭। অন্তর পরিচ্ছন্ন হয়।
১৮। নেকী বৃদ্ধি পায়।
১৯। মেসওয়াককারী ব্যক্তি বিজলীর ন্যায় পুলছিরাত পার হয়ে যাবে।
২০। শরীর ইবাদতের উপযোগী হয়।
২১। শরীরের অতীমাত্রার তাপ দূর হয়ে যায়।
২২। সর্বপ্রকার ব্যাথা দূর হয়।
২৩। পিঠ মজবুত হয়।
২৪। জ্বর থাকলে তা কমে যায়।
২৫। পাকস্থলি ঠিক থাকে।
২৬। দাঁতের মাড়ি শক্ত হয়।
২৭। কন্ঠ সুন্দর হয়।
২৮। জিহ্বা তেজস্বী হয়।
২৯। শরীরের অতিরিক্ত আদ্রতা দূর হয়।
৩০। জান্নাতের দরজা সমূহ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
৩১। স্ত্রী স্বমীর প্রতি, স্বমী স্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্ট থাকে।
৩২। সন্তানাদী নেক ও শালীন হয়।
৩৩। ফেরেস্তাগণ মেসওয়াককারীকে দেখে বলতে থাকে ঐ ব্যক্তি নবীগণের অনুসারী।
৩৪। জাহান্নামের দরজা সমূহ তার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।
৩৫। মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা এমন আকৃতিতে আসে যেমন আকৃতিতে নবীগনের কাছে আসতেন। ৩৬। আল্লামা জালাল উদ্দিন সুয়ূতি (রাহঃ) শরহুচ্ছুদুর নামক কিতাবে উল্যে¬খ করেছেন। মেসওয়াক করার বরকতে মৃত্যুর সময় আত্মা সহজে বের হয়। এর প্রমাণ হলো, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম মুমূর্ষ অবস্থায় মেসওয়াক.করেছিলেন।
৩৭। ভাষা সুন্দর হয়।
৩৮। মৃত্যুর সময় কালিমায়ে শাহাদাত নছীব হয়।
৩৯। চুলের গোড়া শক্ত হয়।
৪০। মুখের জড়তা, তোতলামী, বাকরুদ্ধতা দূর হয়।
৪১। যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়।
৪২। হযরত আলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, মেসওয়াক ধীশক্তি বাড়ায়।
৪৩। কাশি দূর করে।
৪৪। যার মাথায় বা শরীরে পশম নেই মেসওয়াক করার দ্বারা তার শরীরে ও মাথায় চুল গজায়।
৪৫। শরীরের রং উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয় হয়।
৪৬। শয়তানের ওয়াছওয়াছা দূর হয়।
৪৭। সহবাসে অধিক শক্তি লাভ হয়।
৪৮। চেহারা সুন্দর হয়।
৪৯। নিয়মিত দাঁতের হলুদ বর্ণ দূর করে, দাঁত হয় ধবধবে সাদা, উজ্জ্বল।
৫০। চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে।
৫১। জান্নাতে মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
মিসওয়াকের শিষ্টাচার-
1. হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) যখন ঘুম থেকে উঠতেন তখনই মিসওয়াক করতেন।
2.আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেন, মিসওয়াক হল মুখ পরিষ্কারকারী ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কারণ।
3.আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমি তোমাদেরকে অধিকহারে মিওসয়াক করার তাগিদ প্রদান করছি।
4.আলী (রাঃ) মিসওয়াক করার নির্দেশ দান করতেন এবং বলতেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, নিশ্চয় বান্দা যখন মিসওয়াক করে ছালাত আদায়ের জন্য দাঁড়ায়, তখন ফেরেশতা তার পিছনে দাঁড়ায়। অতঃপর তার ক্বিরাআত শুনতে থাকে এবং তার কিংবা তার কথার নিকটবর্তী হয়। এমনকি ফেরেশতার মুখ তার মুখের উপর রাখে। তার মুখ থেকে কুরআনের যা বের হয়, তা ফেরেশতার পেটে ভিতর প্রবেশ করে। অতএব তোমরা কুরআন তেলাওয়াতের জন্য মুখ পরিষ্কার কর।* ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, بِتُّ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّامَ فَاسْتَنَّ ‘আমি একদা নবী (ছাঃ) এর নিকট রাত্রী যাপন করেছিলাম, তখন তিনি মিসওয়াক করেন’।
মিসওয়াক মানুষের স্বভাবজাত আচরণেরও একটি অংশ।উল্লেখ্য যে, এটি শুধু
মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর সুন্নাত নয়। বরং পূর্ববর্তী সকল আম্বিয়ায়ে কেরামেরও
সুন্নাত ছিল। আবু সালামাহ (রাঃ) বলেন, আমি যায়েদ ইবনু খালেদকে দেখেছি
যে, মিসওয়াক তাঁর কানে থাকত যেরূপ লেখক তার কলম কানে রেখে থাকে। অতঃপর যখনই
তিনি ছালাতের জন্য দাঁড়াতেন তখনই মিসওয়াক করতেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন