যে ব্যক্তি খালেস অন্তরে আযানের জবাব দেয়, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। আযানের জবাব দেওয়ার পরে যে একবার দুরুদে ইব্রাহিম পড়ে ও এর পরে আযানের যেই দুয়া আছে সেটা পড়ে তার জন্য রাসুলুল্লাহ ﷺ এর শাফায়াত করা জরুরী হয়ে পড়ে ।
আযান...
‘আযান’ অর্থ, ঘোষণা ধ্বনি । পারিভাষিক অর্থ, শরী‘আত নির্ধারিত
আরবী বাক্য সমূহের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ে উচ্চকণ্ঠে ছালাতে আহবান করাকে
‘আযান’ বলা হয়।
১ম হিজরী সনে আযানের প্রচলন হয়।সূচনা : ওমর ফারূক (রাঃ) সহ একদল ছাহাবী একই রাতে আযানের একই স্বপ্ন দেখেন ও পরদিন সকালে ‘অহি’ দ্বারা প্রত্যাদিষ্ট হ’লে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তা সত্যায়ন করেন এবং বেলাল (রাঃ)-কে সেই মর্মে ‘আযান’ দিতে বলেন।
ছাহাবী আব্দুল্লাহ
বিন যায়েদ (রাঃ) সর্বপ্রথম পূর্বরাতে স্বপ্নে দেখা আযানের কালেমা সমূহ
সকালে এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে বর্ণনা করেন। পরে বেলালের কণ্ঠে একই
আযান ধ্বনি শুনে হযরত ওমর (রাঃ) বাড়ী থেকে বেরিয়ে চাদর ঘেঁষতে ঘেঁষতে ছুটে
এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলেন, ‘যিনি আপনাকে ‘সত্য’ সহকারে প্রেরণ করেছেন,
তাঁর কসম করে বলছি আমিও অনুরূপ স্বপ্ন দেখেছি’। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) ‘ফালিল্লা-হিল হাম্দ’ বলে আল্লাহর প্রশংসা করেন’। একটি বর্ণনা মতে
ঐ রাতে ১১ জন ছাহাবী একই আযানের স্বপ্ন দেখেন’। উল্লেখ্য যে, ওমর
ফারূক (রাঃ) ২০ দিন পূর্বে উক্ত স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু আব্দুল্লাহ বিন
যায়েদ আগেই বলেছে দেখে লজ্জায় তিনি নিজের কথা প্রকাশ করেননি।
আযান ও ইকামতঃ
আযান দেওয়া হচ্ছে ফরযে কিফায়া। এলাকার একটা মসজিদে আযান দিলে বাকী
সবাই যদি না দেয় তবুও নামায হয়ে যাবে। তবে আযান দিলে সবাই সওয়াব পাবে। তাই
একাকী নামায পড়লে বা যখন মসজিদের বাইরে (অথবা মসজিদে পরে দ্বিতীয় জামাত
করলে) নারী বা পুরুষেরা জামাত করে তাহলে আযান না দিলেও চলবে। আর একাকী
নামায পড়লে নারী বা পুরুষের সবার জন্য মুস্তাহাব হচ্ছে ইকামত দেওয়া, তবে
একাকী ইকামত না দিয়ে নামায পড়লে নামায হয়ে যাবে। তবে কেউ যদি ইকামত দেয় সে
সওয়াব পাবে। আর গায়ের মাহরাম পুরুষরা শুনতে না পারলে নারীরাও ইকামত জোরে
বলবে, গায়ের মাহরাম পুরুষ থাকলে চুপে চুপে বা নিচু স্বরে না শুনিয়ে ইকামত
দিবে।
ইকামত কি?
জামাত শুরু করার আগে আরেকবার আযান দিয়ে ডাকা হয়,
একে ইকামত বলা হয়। ইকামত আযানের মতোই, তবে আযানে যেমন কালিমাগুলো ২ বার করে
বলতে হয় সেখানে ইকামতে একবার করে বলা সুন্নত। আর অতিরিক্ত একটা কালিমা
“ক্বাদ কামাতিস-সালাহ” এটা ২ বার বলতে হয়।
দলীল - “বিলাল (রাঃ) কে আযানের বাক্য দু’বার করে ও ইকামতের বাক্য বেজোড় করে বলার নির্দেশ দেওয়া হয়।আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “বিলাল (রাঃ)কে আযানের বাক্যগুলো দু’
দু’বার এবং ইকামতের শব্দগুলো বেজোড় বলার নির্দেশ দেওয়া হলো। ইসমায়ীল (রঃ)
বলেন, আমি এ হাদীস আইয়্যূবের নিকট বর্ণনা করলে তিনি বলেন, তবে “কাদ্
কামাতিস্-সালাহ’ ব্যতীত।”।
সহীহ আল বুখারীঃ ৫৭৯, ৫৮১, তিরমিযীঃ ১৯৩।সুতরাং, উত্তম হচ্ছে সহীহ হাদীসের উপর আমল করে ইকামতে কালিমাগুলো একবার করে বলা। সহীহ হাদীস অনুযায়ী শক্তিশালী মত হচ্ছে, ইকামত হবে এইরকমঃ
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার
আশ-হাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
আশ-হাদু আন্না মুহা’ম্মাদার রাসুলুল্লাহ
হা’ইয়্যা আ’লাস-সালাহ
হা’ইয়্যা আ’লাল ফালাহ
কাদ্ কামাতিস্-সালাহ, কাদ্ কামাতিস্-সালাহ
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
জামাতের মধ্য থেকে একজন ইকামত দিবে। ইকামত দেওয়ার পরে ইমাম “আল্লাহু আকবার” জোরে বলে নামায শুরু করবে। ইমাম শুরু করার পরে মুক্তাদীরা চুপে চুপে আল্লাহু আকবার বলে নামায শুরু করবে। খেয়াল রাখতে হবে যিনি ইমাম তার, যে তিনি তাকবীরগুলো অবশ্যই জোরে বলেন। নয়তো মুক্তাদীরা সিজদাতেই থেকে যাবে।
প্রশ্নঃ আযানের জবাব কিভাবে দিতে হয়?
উত্তরঃ মুয়াজ্জিন আযানে যা যা বলবে তার সাথে সাথে তাই বলতে হবে, শুধুমাত্র হাইয়্যা আ’লাস সালাহ ও হাইয়্যা আ’লাল ফালাহ বললে জবাবে সেটা না বলতে বলতে হবে “লা হাউলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ”। এটা হচ্ছে আযানের জবাব দেওয়ার পদ্ধতি। আযানের জবাব দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নাহ।
বিঃদ্রঃ ফযরের আযানে আস-সালাতু খায়রুম-মিনান-নাওম ও জামাতের ইকামাতের সময়
ক্বাদকা মাতিস সালাহ – এই দুইটি বাক্যের জবাবে এইগুলোই বলতে হবে। অন্য কিছু
বলতে এমন কোনো কিছু সহীহ হাদীসে নাই – তাই যা আছে তাই বলতে হবে।
“আস-সালাতু খায়রুম-মিনান-নাওম” এর জবাবে “সাদাক্বতা ওয়া বারারতা” বলার কোনো ভিত্তি নেই (জাল কথা)।মিরআ’ত ২/৩৬৩, হা/৬৬২।
“ক্বাদকা মাতিস সালাহ” এর জবাবে “আক্বা-মাহাল্লা-হু ওয়া আদা-মাহা” বলা সম্পর্কে আবুদাউদে বর্ণিত হাদীছটি ‘যঈফ’।
আবু দাউদ হা/৫২৮, শায়খ আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/২৪১।
প্রশ্নঃ আযানের জবাব দিলে কি প্রতিদান পাওয়া যাবে?
উত্তরঃ রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি খালেস অন্তরে আযানের জবাব দেয়, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়”। সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩৮৫। আযানের জবাব দেওয়ার পরে যে একবার দুরুদে ইব্রাহিম (নামাযে যেই দুরুদ পড়া হয় সেটা) পড়ে ও এর পরে আযানের যেই দুয়া আছে সেটা পড়ে তার জন্য রাসুলুল্লাহ ﷺ এর শাফায়াত করা জরুরী হয়ে পড়ে । কেউ আরো অতিরিক্ত করতে চাইলে এই আমল করতে পারেন।
উচ্চারণঃ
আল্লা-হুম্মা রাব্বা হা-যিহিদ্ দা‘ওয়াতিত্ তা-ম্মাহ। ওয়াস সালা-তিল
ক্বা-’ইমাহ। আ-তি মুহা’ম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাদীলাহ। ওয়াব্‘আছহু
মাক্বা-মাম মাহ’মূদানিল্লাযী ওয়া‘আদতাহ। অর্থঃ “হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ
আহ্বান এবং প্রতিষ্ঠিত নামাযের তুমিই প্রভু! মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে ওসীলা (জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তর) এবং ফযীলত (সকল
সৃষ্টির উপর অতিরিক্ত মর্যাদা দান করুন), আর তাঁকে মাকামে মাহমূদে
(প্রশংসিত স্থানে) পৌঁছিয়ে দিন, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাঁকে দিয়েছেন।
রাসুলুল্লাহ ﷺ এর শাফায়াত পাওয়ার সহজ আমলঃ
আমরা আসলে অনেকেই জানিনা কোন কাজটা করলে কি লাভ। এইজন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ
ইবাদতের ব্যাপারে আমরা উদাসীন থাকি। অথচ একটু মনোযোগী হলেই অনেক কম কষ্টে
অনেক বেশি সওয়াব ও উপকার পাওয়া যেতে পারে বিভিন্ন সহজ আমলের মাধ্যমে।
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “আযান শুনে কেউ যদি আযানের দুয়া পড়ে কিয়ামতের দিন
ঐ ব্যাক্তির জন্য সুপারিশ করা আমার জন্য অনিবার্য হয়ে যাবে”। সহীহ আল-বুখারী ৬১৪, তিরমিযী ২১১১, নাসায়ী ৬৮০, আবু দাউদ ৫২৯, ইবনু মাজাহ ৭২২, আহমাদ ১৪৪০৩।
বিঃদ্রঃ আমাদের দেশের অনেক বই পুস্তক ও রেডিও টিভিতে যে দুয়া দেওয়া হয়
তার মধ্যে কিছু অতিরিক্ত কথা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যা কোনো সহীহ হাদীসে
আসে নাই। অতিরিক্ত কথার মাঝে আছে "ইন্নাকালা তুখলিফুল মিয়াদ",
ওয়াদ-দারাজাতার রাফীয়াতা" এইরকম কিছু কথা অতিতিক্ত আছে বায়হাকী কিতাবে
যার সনদ সহীহ নয়। তাই এখানে দুয়াটা যেইভাবে দেয়া আছে এইভাবেই পড়া উত্তম।
কারণ সবগুলো হাদীসের কিতাবে এইভাবেই এসেছে, এর বিপরীতে যে অতিরিক্ত কথাগুলো
দেখা যায় এইগুলোর সনদ দুর্বল অর্থাৎ জাল অথবা জয়ীফ।
আযানের জবাব দেওয়া সুন্নত উল্লেখ করেছেন, আমার জানামতে ওয়াজিব। আল্লাহ এই আমল করার তাওফিক দিন, আমীন
উত্তরমুছুন